এইচ-ট্যাগ নিয়ে অনেক অনেক কনফিউশন দেখেছি অনেকের মাঝে। কেন? কী এমন গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটা? এইচ-ট্যাগ তো ওয়েব ডেভেলপারের ইস্যু। আপনি তো মার্কেটার। আপনার কেন এটা নিয়ে মাথা ঘামানো প্রয়োজন?
আসলেই কি প্রয়োজন? নাকি অযথাই এখানে সময় নষ্ট করছেন? অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি- একটা নিস সাইটে এইচ-ট্যাগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে? আমার মনে হয়, বর্তমান সময়ে এসে আর এসব বলার সুযোগ নেই। একজন মার্কেটার মানে তিনি অল-ইন-ওয়ান। অলরাউন্ডার। মার্কেটিং-এ বস হতে হলে ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, টেকনিক্যাল পারসন সবই হতে হবে। যাইহোক, বরং লেখাটা এগিয়ে নিই এসব কথা রেখে। কারণ এসব এখন সবাই-ই জানেন। জেনেশুনেই মার্কেটিং-এ আসেন সবাই, এরকমই আমার ধারণা।

আমি যেহেতু প্রচুর সার্ফ করি অনলাইনে তাই অনেক নিস সাইট দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। স্টিল আমি প্রতিদিন-ই দেখি। প্রত্যেকের ব্যাপারটাই বোঝার চেষ্টা করি। এই অভিজ্ঞতাটা অনেক জরুরি বলে মনে করি।
যাইহোক, এই দেখতে গিয়ে যে ব্যাপারটা জানতে পেরেছি সেটা হচ্ছে- আমি দেখেছি প্রায় প্রত্যেকেই এই এইচ-ট্যাগ ব্যাপারটায় ভুল করেন। যেখানে এইচ ট্যাগ দেয়া জরুরি সেখানের সাব-টাইটেল বোল্ড করে রেখেছেন মাত্র। কিন্তু এটাতো সমস্যা। কেন সমস্যা, তা নিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে বরং এইচ-ট্যাগ কীভাবে প্রোপারলি ব্যবহার করবেন সেদিকেই যাবো আজকে।
সুতরাং আজকে চেষ্টা করবো এইচ ট্যাগের ব্যবহারটা ক্লিয়ার করতে। অর্থাৎ আমি যেভাবে আমার সাইটগুলোতে ইউজ করি। কিংবা সফল নিস সাইটগুলো ফলো করে যেভাবে দেখেছি, সেটাই বর্ণনা করার চেষ্টা করবো সংক্ষেপে।
ধরুন, আপনি গরু নিয়ে একটা আর্টিক্যাল লিখবেন। আর্টিক্যালের টাইটেল হতে পারে: বাংলাদেশের গরুদের মাঝে ভালোবাসার প্রকাশ যেমন দেখেছি।
এই টাইটেলটা অটোমেটিক ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো সাইটে H1 ট্যাগ হয়ে যায়।
অর্থাৎ আর্টিক্যালের ভেতরে আমরা H2 ট্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করি।
তাহলে আর্টিক্যালের কোথায় কোন ট্যাগ বসবে সেটা দেখা যাক।
একটা আর্টিক্যালের শুরুতে একটা ইন্ট্রু থাকে। যেটা ১৫০ ওয়ার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা ভালো। এই ১৫০ ওয়ার্ড লেখা দিয়ে অডিয়েন্সকে অবশ্যই আর্টিক্যালের ভেতরে নিয়ে যেতে বাধ্য করতে হবে।
তো, গরুদের যদি আপনি ক্যাটাগরাইজড করেন, তাহলে কীভাবে করবেন?
- গাভী (সাব-টাইটেল: গাভীদের ভালোবাসা)
- ষাড় (সাব-টাইটেল: ষাড়দের গোয়ার্তুমি)
এই দুইটা অবশ্যই হবে H2 ট্যাগ।
যদি এরকম সাব-টাইটেল ইউজ করেন: টপ টেন ভালোবাসাময় গাভী – তাহলে এটাও H2 হবে।
এখন যদি এভাবে সাব-টাইটের দেন: ঢাকা জেলার গাভীর ভালোবাসা – এটা হয়ে যাবে H3 ট্যাগে।
যদি দেন সাব-টাইটেল: ধানমণ্ডি থানার গাভীরা কেমন? – এটাকে H4 ইউজ করতে পারেন।
ব্যাপারাটাকে আপনাদের বোধগম্য করাতে পেরেছি? অর্থাৎ মূল টপিক থেকে যতো ভেতরে/গভীরে যেতে থাকবেন H-এর পাওয়ার দুর্বল হবে।
সংক্ষেপে দেখেন:
— প্রাণী H1
—- মানুষ H2
——- নারী H3
———— বালিকা H4
———— কিশোরী H4
———— যুবতী H4
——- পুরুষ H3
———— বালক H4
———— কিশোর H4
———— যুবক H4
—- গরু H2
——- গাভী H3
——- ষাড় H3
—- মাছ H2
——- রুই H3
——- কাতল H3
——- বোয়াল H3
—- কুকুর H2
——- এলসেশিয়ান H3
——- বুলডগ H3
——- পুডল H3
—- বিড়াল H2
——- মিনি H3
——- হুলো H3
অর্থাৎ এভাবে যতো সাব-ক্যাটাগরাইজড হবে, এইচের পাওয়ার কমতে থাকবে।
এইচ-ট্যাগ নিয়ে কমন কিছু কোশ্চেন এবং উত্তর
বিভিন্ন জায়গায় কমন কিছু কোশ্চেন দেখি এইচ-ট্যাগ নিয়ে। এই প্রশ্নগুলো ঘুরে-ফিরে একই। গুগলে হালকা একটু সার্চ দিলেই উত্তর মিলে। কিংবা কমনসেন্স কাজে লাগালেও চলে। যাইহোক, চলুন, এরকম কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর দেখে নিই:
প্রশ্ন-০১: একটা আর্টিক্যালে কয়টা এইচ-ওয়ান ট্যাগ ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: একটা আর্টিক্যালে যতোগুলো প্রয়োজন ততোগুলোই ব্যবহার করতে পারবেন। তো এখন কথা হচ্ছে- এইচ-ওয়ান ট্যাগ যেহেতু সবচেয়ে বড় সাইজের ফন্ট শো করে এবং একটা আর্টিক্যালের টাইটটেল একটাই হয় এবং টাইটেলটাই যেহেতু সবচেয়ে বড় ফন্টে দিতে হয় তাই সাধারণত একটা আর্টিক্যালে একটাই এইচ-ওয়ান ট্যাগ বসে। কিন্তু এটা কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। যদি একাধিক বসানোর সুযোগ থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে আপনি বসাতে পারেন। এই নিয়ে কোনো সমস্যা কোথাও নেই।
প্রশ্ন-০২: এইচ-ট্যাগের কমন ভুল কোনটা?
তেমন কিছুই ভুল হবে না যদি আপনি উপরের সিস্টেম মেনে এইচ-ট্যাগ ব্যবহার করেন। অবশ্য ঠিক এটা মেনেই করতে হবে এমন নয়। তবে এই সিস্টেমটা ভালো। সার্চ ইঞ্জিন বট তাহলে খুব সহজে আপনার লেখাটা রিড করতে পারে।
তাই অনেক এসইও এক্সপার্ট মনে করেন কেউ যদি দু’টো এইচ-ট্যাগের মধ্যে একটা গ্যাপ দেন, তাহলে সেটাতে সার্চ ইঞ্জিন বট একটা ধাক্কা খায়। তাই এমনটা না করাই ভালো। অর্থাৎ আপনি এইচ-টু ট্যাগ ব্যবহারের পরপরই এইচ-ফোর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন- এইচ-থ্রি করতে পারেন। তেমনি এইচ-থ্রির পর এইচ-ফোর ব্যবহার না করে এইচ-ফাইফ ব্যবহার করা একটু ঝামেলার সৃষ্টি করে।

ওয়ার্ডপ্রেসের বর্তমান যে এডিটর আছে সেটাতে এই সমস্যাটা প্রথম আমার চোখে পড়ে। তারপর এই নিয়ে পড়াশোনা করে দেখেছি বিষয়টা আসলেই জটিলতা তৈরি করে। সুতরাং এই বিষয়টা আপনারা এড়িয়ে চলতে পারেন।

প্রশ্ন-০৩: এক পেজে সর্বোচ্চ কতটা এইচ-টু ট্যাগ ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর: কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। যতোগুলো প্রয়োজন ব্যবহার করতে পারবেন। আমি মূল সাব-টাইটেলগুলো এইচ-টু দিই। প্রোডাক্ট নামগুলো এইচ-থ্রিতে দিই। প্রোডাক্টের ফিচার, প্রজ, কনস এগুলো এইচ-ফোরে রাখি… এভাবেই সাধারণত দিই আমি।
প্রশ্ন-০৪: এইচ-ট্যাগ প্রোপারলি ইউজ না করলে কি প্রবলেম হবে?
উত্তর: না। আবার হ্যাঁ। না এই অর্থে যে, এমন কোনো সোর্স আমি পাইনি যেখানে বলা হয়েছে গুগল এইচ-ট্যাগের জন্য কোনো সাইট পেনাল্টি দিয়েছে। আবার হ্যাঁ এই অর্থে বলছি যে, এইচ-ট্যাগ প্রোপারলি ইউজ না করলে সার্চ ইঞ্জিন বট বাধাগ্রস্ত হয়। সুতরাং সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু হয়তো কেউ ব্যাপারটাকে ওভাবে নোটিশ করেনি এখনও। আর আমার কথা হচ্ছে- যেহেতু একটু ইফোর্ট দিলেই এই এইচ-ট্যাগ ব্যাপারটা সুন্দর করে তৈরি করা যায়, তাহলে কেন করবো না? আপনি আপনার সাইটে এইচ-ট্যাগ প্রোপারলি ইউজ করেন, দেখবেন আর্টিক্যালটার ডিজাইন অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।
প্রশ্ন-০৫: এইচ-ট্যাগ কী?
উত্তর: আর্টিক্যালে যে টাইটেল বা হেডিং ব্যবহার করা হয় সেগুলোকেই বলা হয় এইচ-ট্যাগ। শব্দটা আসলে এইচটিএমএল থেকে এসেছে। যেহেতু এইচটিএমএল কোনো কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ না, তাই এর শর্টকাট যেসব দিয়ে ওয়েবসাইট বানানো হয় সেগুলোকে কোড না বলে ট্যাগ বলা হয়। তেমনি একটা ট্যাগ হচ্ছে এইচ-ট্যাগ। ইংরেজি সংজ্ঞাটা এরকম:

সর্বমোট ৬টা এইচ-ট্যাগ আছে। এগুলো হচ্ছে:-
এটা এইচ-ওয়ান ট্যাগ
এটা এইচ-টু ট্যাগ
এটা এইচ-থ্রি ট্যাগ
এটা এইচ-ফোর ট্যাগ
এটা এইচ-ফাইভ ট্যাগ
এটা এইচ-সিক্স ট্যাগ
সবিশেষ
আশা করি এইচ ট্যাগ নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হবে না। সুনির্দিষ্ট কোনো প্রশ্ন থাকলে করবেন। তবে আমার বিশ্বাস এইচ-ট্যাগ নিয়ে আর কোনো জটিলতা আপনাদের মধ্যে হবে না।
কিন্তু হয়তো, তারপরও কোনো কোয়েরি থাকতে পারে। কারণ, হয়তো আপনাদের উপযোগী করে লেখাটা সহজভাবে লিখতে পারিনি। তািই সংকোচ না করে প্রশ্ন করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো উত্তর দিতে।
ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।