নিস সাইট নিয়ে কাজ করেন কিন্তু গুগল আপডেটকে ভয় পান না এরকম কেউ আছেন?
আমি এরকম কাউকে জানি না।
সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করার পরেও দেখা যায় গুগল হিট দিয়ে বসে আছে।
তাহলে কি এমন কোনো ওয়ে নাই যেভাবে কাজ করলে গুগল হিট দেবে না?
কিংবা গুগল হিট দিতে পারবে না এরকম কোনো পদ্ধতি আছে?
এই লেখায় কিছু কেসস্টাডি এবং রিয়েল প্রজেক্টের উদাহরণ টেনে এই বিষয়টাই দেখার চেষ্টা করা হবে। বরাবরের মতো এখানে যাবতীয় মতামত/ভারডিক্ট সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব। যেকারও এসব নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে ইগনোর করে যেতে পারেন।
সাম্প্রতিক গুগল আপডেট এবং কিছু কথা
সাম্প্রতিক সময়ে গুগল যেভাবে আপডেট দেয়া শুরু করেছে, তাতে করে “দিনে দুইবেলা প্যারাসিটামল” পদ্ধতিও হার মেনেছে। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও বাস্তবতা এমনই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমার মতো অলস মার্কেটারকেও সোজা করে ছেড়ে দিয়েছে গুগল।
সকালের নাস্তা খাওয়ার আগে দেখি গুগল সবকিছু ঠিকঠাকই চালিয়ে যাচ্ছে। নাস্তা করে এসে দেখি বদ গুগল বাঁকা হয়ে গেছে। এ কি যন্ত্রণা!
নিজের সাইটতো আছেই, ক্লায়েন্টও দৌড়ের উপর রাখছে গত কয়েকটা মাস ধরে। বিশেষ করে ডিসেম্বর ২০২০ গুগল কোর আপডেট এবং জানুয়ারির মাইল্ড আপডেটগুলো (জানুয়ারি ৭ এবং ৮, ২০২১। জানুয়ারি ১২, ২০২১। জানুয়ারি ১৭, ২০২১ [সম্ভবত]) যেন একেকটা কালবোশেখীর ঝড়।
এই হলো সাম্প্রতিক খবর। না হলো না। সাম্প্রতিক গুগল আপডেট হলো এরকম- আপনি যখন আমার এই লেখাটা পড়ছেন, তখনও হয়তো গুগল রুল আউট করছে নতুন কোনো আপডেট। ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হলেও বাস্তব কিন্তু এটাই।
তো এই যদি ব্যাপার হয়, তাহলে করণীয় কী? গুগল আপডেট দেবে আর আমরা কি বসে বসে মার খাবো? এমন কোনো করণীয় কাজ কি নেই যেটা করলে গুগল আপডেট দেবে কিন্তু নিস সাইটের কিছুই হবে না?

আলোর মুখ বাতি জ্বালিয়েই দেখতে হবে? আমরা কি কোনো সমাধান বের করতে পারবো না? গুগল কি বিনাদোষে আমাদেরকে হেনস্থা করেই যাবে?
এই ব্যাপারটা নিয়েই আমি ভাবছিলাম।
সমাধান পেয়েছেন?
না।
আবার হ্যাঁ।
এ কেমন কথা? একটা প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ এবং না একই সাথে হয় কিভাবে?
হয়রে ভাই, হয়।
আসুন, এই ব্যাপারটা নিয়েই আলাপ করবো। আমার নিজের সাইট, ক্লায়েন্টের সাইট, গ্রুপের অনেক ভাই-ব্রাদারদের সাইট গত পৌনে দুইমাসে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখেছি অনেকগুলো। এই দেখা থেকে যে অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছে, সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি কাজে লাগবে আপনাদের।
উল্লেখ্য, বরাবরের মতোই আমার অন্যান্য লেখার মতো এই লেখাতেও কোনো আর্নিং স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হবে না। এবং এই ভার্ডিক্ট/মতামত সম্পূর্ণই আমার নিজের। এর সাথে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে। এরচেয়ে ভালো কোনো সলিউশন জানা থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ জানাই। আমার লেখা সম্পূর্ণই আমার জানাশোনার মধ্যে থেকেই লিখি।
নিস সাইট আপডেট গল্পকথা
তবে শুরুতেই কয়েকটা বাস্তব ঘটনা বলা যাক। গল্পগুলো আমার নিজের, আমার ক্লায়েন্টের, এবং গ্রুপের ভাই-ব্রাদারদের।
কেসস্টাডি-১
আমাজন অ্যাফিলিয়েট বাংলাদেশ গ্রুপের পরিচিত মুখ অভীক (ছদ্মনাম)। চাকরি করতেন মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীতে। কোভিড-১৯ পেনডেমিক ছোবলে ছাটাই হন গত বছরের শুরুর দিকেই। চাকরির পাশাপাশি নিস সাইট নিয়ে টুকটাক কাজ করতেন। চাকরি হারিয়ে প্রথমে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেও নিজেকে দ্রুত গুছিয়ে নিলেন। ঠাণ্ডা মাথায় নিজের নিস সাইটগুলো নিয়ে বসলেন। গ্রুপেরই আরেকজন পরিচিত মুখের পরামর্শে মাত্র একটা সাইট নিয়ে কাজ শুরু করলেন তিনি। কয়েক মাসের মধ্যেই প্ল্যানমাফিক কাজ করে সাইটের আর্নিং আড়াইশ’/তিনশ’ থেকে সতেরোশ’/দুই হাজার+ নিয়ে এলেন।
তারপর এলো ডিসেম্বর ২০২০। রাতারাতি আবার সেই আগের অবস্থায়। যে সাইট নভেম্বর মাসে প্রায় তিন হাজার ডলার আর্নিং হয়েছে, সেই সাইট থেকেই ডিসেম্বর মাসে কমিশন হলো মাত্র এগারোশ’। আর জানুয়ারির ২৪ তারিখ পর্য়ন্ত আয় হলো মাত্র আটশ’ তেরো ডলার।
অভীকের মাথা এলোমেলো না হয়ে উপায় কী? কী করবেন এখন তিনি? সাইট নিয়ে রাত-দিন পড়ে থাকেন। পইপই করে খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন কী সমস্যার কারণে এমন হলো? যেখানে আগে দৈনিক ট্রাফিক আসতো প্রায় দুই হাজার, এখন তিনশ’/চারশ’। দিন দিন আরও কমছে।
কী হবে এবার অভীকের?
কেসস্টাডি-২
এবার যার গল্প বলছি তিনি একজন ছাত্র- হাবীবুর রহমান (ছদ্মনাম)। এর আগে ছোট একটা সাইট ফ্লিপও করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা, দক্ষ মেনটর, গ্রুপের আরেক ভাইয়ের ওয়ান-টু-ওয়ান কোচিং করে, বেশ প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করেছেন নতুন আরেকটা সাইট।
এবার টার্গেট ছিলো প্রতি মাসে এক হাজার ডলার আয় হলেই সাইট সেল করে দেয়া। সেই লক্ষ্যে সুন্দরভাবে কাজও করছিলেন। সাইটও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো। নিজের সাফল্যে গর্ববোধ করছিলেন বারবার। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে প্রায় আটশ’ ডলার আয় হয়েছিলো সাইট থেকে। তারপরই দুর্ঘটনা। রাতারাতি মাত্র দুই মাসের মাথায় সাইটের ইনকাম একশ’র নিচে নেমে গেছে।
যেখানে আগে সেমরাশে ট্রাফিক দেখাতো প্রায় ছয় হাজার প্রতি মাসে। এখন সেখানে হাজারের নিচে নেমে গেছে।
এই অবস্থায় পাগল না হয়ে উপায় কী? কোনো উপায়ও জানা নেই। মেনটরও কোনো সমস্যা বের করতে পারছেন না। সমস্যাতো নেইও। আসলেই তাই। অনপেজ-অফপেজ সব একদম ন্যাচারাল ওয়েতে করা। তারপরও কেমন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কীওয়ার্ড পজিশন হারাচ্ছে, ট্রাফিক ক্রমান্বয়ে কমছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাজনে সেল কমছে, আয় কমছে।
সাইট অউনার আমাকে সাইটটা দেখান এই জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ। টানা ৭/৮ ঘণ্টা আমি সাইটটা নিয়ে রিসার্চ করেছি। সব ঠিকঠাক আছে। শুধু দুইটা বিষয় নোটিশ করেছি আমি:
১। সাইটটা তিনি তৈরি করেছেন আরেকটা সাইটকে ফলো করে।
২। সাইট আপডেট করেননি অনেক দিন। নতুন আর্টিক্যাল নাই।
এছাড়া তৃতীয় আরেকটা প্রবলেম নোটিশ করেছি। যেটা সাইট অউনার ভাইকে ইচ্ছে করেই বলিনি। তাহলে মেনটরের সাথে আবার গণ্ডগোল লেগে যেতে পারে।
কেসস্টাডি-৩
এবার যার কথা বলছি তার নাম মো বিল্লাল হোসেন সরকার (ছদ্মনাম নয়)। তিনি ফুলটাইম নিউবি ডিজিটাল/অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। অনেকগুলো নিস সাইট নিয়ে কাজ করেন। কয়েকটা নিজের, বাকীগুলো বৈদেশী ক্লায়েন্টের। গুগল কোর আপডেট সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে তিনি বেশ ভালো শিক্ষা নিয়েছেন। সেই আপডেট খুব একটা বড় কিছু না হলেও সামান্য ভুলের জন্য তিনি কাত হয়ে পড়েছিলেন।
তাই এবার প্রস্তুতি ছিলো আগে থেকেই। ফলে তিনি চিন্তা করলেন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন। প্রস্তুতি হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু দূরে সরে গেলেন। ফুলটাইম কাজে মনোনিবেশ করলেন। আর সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে বেশ কিছু ক্ষতির মুখোমুখি হলেও রেজাল্ট মোটামুটি মন্দ নয়। আশা করি তিনি এই লেখায় সেসব বিষয় তুলে ধরবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে আমার অন্য কোনো লেখায় আমি নিজের নিস সাইট নিয়ে তেমন কিছু বলিনি কখনও। এই লেখায় হালকা কিছু টাচ দেয়ার চেষ্টা করবো।
আমার বেশিরভাগ সাইট হোম নিস নিয়ে করা। এটা সবাই জানেন। এর বাইরে যে হাতে গোণা দুয়েকটা সাইট আছে, সেগুলো নিয়ে বলার মতো কিছু নেই। এমনকি ক্লায়েন্টদের যে সার্ভিস দিই, সেগুলোও ম্যাক্সিমাম এই নিসেই করা। সুতরাং হোম নিস নিয়ে বানানো সাইট সম্পর্কেই বলতে যাচ্ছি। কেন এই নিস সেই ব্যাখ্যা আপাতত করতে যাচ্ছি না। আর এই নিসের বাইরে একটা সাইট নিয়েও বলার ইচ্ছে আছে।
তবে দ্বিতীয় যে কথাটা বলার দরকার- আমি সবসময় আমার নিজের বানানো নিস সাইট প্ল্যান ফলো করেই আমার এবং ক্লায়েন্টের নিস সাইটগুলো বানিয়ে থাকি।
গুগলের আপডেট থেকে বাঁচতে চান?
অবশ্যই চান। তাই না?
আমি নিজেও চাই। এরই প্রেক্ষিতে আজকের লেখা।
এই লেখায় এমন কিছু বিষয় অবতারণা করতে যাচ্ছি যেগুলো ফলো করলে গুগল যতো আপডেট-ই দিক না কেন, আপনার নিস সাইটের ক্ষতি হবে না। এবং এই পুরো ব্যাপারগুলো আমার নিজের নিস সাইটের প্রেক্ষিতে তুলনা করে বলবো। ইনশাআল্লাহ আপনার এগুলো কাজে লাগবে।
ডোমেইন সিলেকশন
ডিসেম্বর ২০২০ গুগল আপডেটে ডোমেইন নাম বিষয়টার কারণে কিছু সাইট মাইল্ড পেনাল্টিতে পড়েছে। বেদনাদায়ক হলেও সত্যি, পিএমডি টাইপ ডোমেইনগুলো এই আপডেটে ভালো করেছে। ঠিক পিএমডি নিয়। নিস মেনশন করা ডোমেইন নেমগুলোর কথা আসলে বলতে চাচ্ছি।
ধরুন, আপনি হোম নিস নিয়ে কাজ করেন। এখন দেখুন, আপনার নিস সাইটের ডোমেইন নামে হোম শব্দটা আছে কিনা। যদি থাকে, তাহলে আমার অভিজ্ঞতা বলে, আপনার নিস সাইট এই আপডেটে তেমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। কেসস্টাডি-১ এবং কেসস্টাডি-২ এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলো বলে মনে হয়েছে আমার।
ডোমেইন সিলেকশন নিয়ে আমার নিজস্ব মতামত এখান থেকে দেখে নিতে পারেন:
নিয়মিত আপডেট
আমার প্রথম সাকসেসফুল নিস সাইট আমি ফ্লিপ করেছিলাম ইমপায়ার ফ্লিপ্পার্সে। ১৭টা আর্টিক্যাল ছিলো সাইটে। সম্ভবত এই কারণে দ্রুততম সময়ে সাইটটা সেল হয়েছিলো।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই স্ট্র্যাটেজি এখন প্রয়োগ করা নেহায়েত বোকামি। এমনকি প্রায় প্রত্যেকটি স্ট্র্যাটেজি প্রতিনিয়তই পাল্টে যাচ্ছে। আপনি যদি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট না করেন, তাহলে এই সেক্টরে ভালো কিছু করার কোনো ওয়ে নাই।
একদম না।
বিশেষ করে আমাজন কমিশন স্ট্রাকচার চেঞ্জ করে ফেলার পর, অল্প আর্টিক্যাল দিয়ে সাকসেস পাবার সম্ভাবনা সামান্যতমও নেই। এভাবে অন্যান্য দিকেও নিজেকে আপডেট রাখতে হবে এই সেক্টরে ভালো কিছু করার জন্য।
কেসস্টাডি-১ এবং কেসস্টাডি-২, এবং আমার নিজের কিছু সাইট নিয়মিত আপডেট না করার ফলে ট্রাফিক ড্রপ হয়েছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিলো। ফলে সাইটে দ্রুত কিছু আর্টিক্যাল পাবলিশ করার ফলে জানুয়ারির শেষের দিকে এসে সেটার ফল পাচ্ছি।
উল্লেখ্য, আমার পুরো অ্যাফিলিয়েট লাইফ ক্যারিয়ারে ডিসেম্বর ২০২০ এবং জানুয়ারি ২০২১- এই দুই মাসে আর্টিক্যালের জন্য সবচেয়ে বেশি সময়, অর্থ ব্যয় করেছি।
নিস সাইটে নিয়মিত আর্টিক্যাল পাবলিশ করা হচ্ছে এরকম খুব কম সাইট হিট খেয়েছে এবার। আপনার এরকম পরিস্থিতি থাকলে আশা করি বিষয়টা নোটিশ করেছেন ইতোমধ্যে।
অনপেজ আপডেট
নিস সাইটের অনপেজ এসইও ঠিকঠাকভাবে করা অত্যন্ত জরুরি। আর করে রেখে দিলেই হবে না। সবসময় আপডেট করতে হবে। বিশেষ করে পুরনো আর্টিক্যাল সবসময় আপ-টু-ডেট রাখাটা জরুরি। এই কাজটাতে অনেক মার্কেটার আলসেমি করেন। যা মোটেও ঠিক নয়। এই আপডেট করার জন্য থার্ডপার্টি এআই টুলস ইউজ করতে পারেন। যেমন- ফ্রেজ, সার্ফারএসইও, মার্কেটমিউজ। এই তিনটা থেকে সার্ফার এসইও টুলটা আমার পছন্দ। আপনি চাইলে অন্য যেকোনো টুল ইউজ করতে পারেন।
অফপেজ আপডেট
নতুন আর্টিক্যালতো অবশ্যই, পুরনো আর্টিক্যাল আপডেট করার পর সবসময় সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে দেবেন। করাটা ভালো। যেমন- ফেসবুক, ট্যুইটার, পিনটারেস্ট… ইত্যাদি। ওখান থেকে ট্রাফিক পাবেন, সেজন্য নয়, জাস্ট শেয়ার করার জন্য শেয়ার করবেন।
গুগলকে জানুন
এটা হচ্ছে সবচেয়ে ভাইটাল পয়েন্ট। গুগলের ২০০+ র্যাংকিং ফ্যাক্টর সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন? ধরে নিলাম আপনি পড়েছেন। এখন আবার পড়ে দেখুন। একদম নতুন কিছু জানতে পারবেন। বিশেষ করে যখনই গুগলের কোর আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন, আপনার সাইটের সাথে এই ফ্যাক্টরগুলো মিলিয়ে দেখুন। দেখুন কোনো গ্যাপ আপনার সাইটে আছে কিনা।
গুগলকে কখনও বোকা ভাববেন না। আপনি আজকে যেটা ভাবছেন, গুগল সেটা ৫/৭ বছর আগেই ভেবে রেখেছে। সুতরাং যদি মনে করেন, গুগল বুঝতে পারবে না, খুব সহজেই ফাঁকি দিয়ে ফেলবেন, তাহলে বলতে হয়, আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাস্তবে ফিরে আসুন। বাস্তবতা বুঝতে শিখুন। গুগলকে বোকা বানাতে না গিয়ে গুগলের র্যাংকিং ফ্যাক্টরগুলো স্টাডি করুন।
নো ব্যাকলিংক
গেস্টপোস্ট, নিস এডিট, স্পন্সর্ড লিংক, অথোরিটি লিংক, গুগল নিউজ এপ্রুভড লিংক, হাই ডিএ লিংক, হাই ট্রাফিক লিংক… যতোরকম লিংক আছে, এগুলো থেকে সরে আসার বেস্ট সময় এটাই। তবে একটা সাইটের জন্য বেসিক লিংকবিল্ডিং জরুরি মনে করি আমি। বিশেষ করে সোশ্যাল প্রোফাইল, ব্লগ কমেন্ট, এবং সোশ্যাল শেয়ার… এগুলো করা যেতে পারে। এই টাইপ লিংকগুলো একটা সাইটের অথোরিটি বিল্ড করে।
এছাড়া একচেটিয়াভাবে বলা যায়- ব্যাকলিংক প্রোফাইল যতো ভারি হবে, গুগলের কাছে নিস সাইট ততোটাই রিস্কি হিসেবে দেখা দেবে।
হ্যাঁ, একথা ঠিক, ব্যাকলিংক প্রোফাইল ছাড়াও অনেক নিস সাইট হিট খেয়েছে, তবে সেটা সাময়িক। হয়তো কমপিটিটর বেড়ে যাবার কারণে এমনটা হতে পারে। কিন্তু সেটা অবশ্যই ব্যাকলিংকের জন্য নয়।
কমপিটিটর বেড়ে গেলে এমনিতেই অনেক সময় র্যাংক ড্রপ হয়। সেটাকে প্রতিরোধ করার অন্য উপায় আছে। চলুন সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যাক।
কমপিটিটর বিড করুন
ধরুন আপনি কাজ করছেন best gol alu কীওয়ার্ড নিয়ে। ধরে নিই এটা এমন একটা কীওয়ার্ড যেটার কমপিটিটর ছিলো না যখন আপনি কাজ শুরু করেছেন। ফলে আর্টিক্যাল দেয়ার এক মাসের মাথায় সেটা র্যাংক হয়ে গেছে। এবং নিয়মিত সেল পাচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখলেন কোনো কারণ ছাড়াই সেল বন্ধ হয়ে গেছে। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলেন র্যাংক ড্রপ হয়ে গেছে। কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। মাথার চুল ছিড়ছেন রাগে-ক্ষোভে। কোনো ব্যাংকলিংক করেন নাই, কারণ কমপিটিটর ছিলো না। আর্টিক্যাল কোয়ালিটি ঠিক আছে, প্রোডাক্ট সিলেকশনও ভালো।। কারণ এতোদিন সেল পেয়েছেন। তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা হলো, খোঁজ নিলে দেখবেন যখন কাজ শুরু করেছিলেন- ছয় মাস আগে, তখন এই কীওয়ার্ডের কোনো কমপিটিটর না থাকলেও, গত ছয় মাসে যথেষ্ট কমপিটিটর তৈরি হয়ে গেছে।
তাহলে আপনি কী করবেন এখন?
কমপিটিটর যেন তৈরি না হয় সেই ব্যবস্থা করবেন?
না, তা করবেন না।
আর সেটা সম্ভবও নয়।
তাহলে?
তাহলে যেটা করবেন, নিয়মিত কমপিটিটর চেক করবেন। কমপিটিটর যেন আপনার থেকে ভালো কিছু করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেবেন। কমপিটিটর আর্টিক্যাল নিয়ে রিসার্চ করবেন। আপনার আর্টিক্যালের সাথে তার আর্টিক্যালের গ্যাপ খুঁজে বের করে সেটা ফুলফিল করবেন।
আরেকটা যে কাজ করবেন, সেটা হচ্ছে- এই কীওয়ার্ডের সিমিলার লংটেইল কীওয়ার্ড বের করে সাইটে নিয়মিত আর্টিক্যাল দেবেন। এবং ইন্টারলিংক করবেন সিলো স্ট্রাকচার ফলো করে।
যেমন আপনার মেইন কীওয়ার্ড ছিলো- best gol alu। এখন আপনি এটার রিলেটেড এই কীওয়ার্ডগুলো নিয়ে আর্টিক্যাল দিতে পারেন:-
- best red gol alu
- best tall gol alu
- best gol alu for vorta
- best alu parata
- best recipes for alu gobi
- best natural fertilizer for alu
এরকম আরও অনেক কিছু।
খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।
তাই না?
এগুলো দিয়ে সাইটে আর্টিক্যাল দিলে দেখবেন দ্রুত র্যাংক হয়ে যাচ্ছে। কারণ লংটেইল হওয়াতে সাধারণত এগুলোর কমপিটিশন তুলনামূলক কম থাকে। আর সবচেয়ে বড় যে কাজটা হবে, সেটা হচ্ছে- সিমিলার আর্টিক্যালগুলোকে একটা সিলো স্ট্রাকচারের মাধ্যমে ইন্টারলিংক করতে পারবেন। যেটা সাইটের অথোরিটিকে বাড়িয়ে দেয়। গুগল আপডেটগুলোতে সাধারণত এরকম সাইট হিট খায় না।
কারণ ধারাবাহিক এরকম নিস সাইটে আর্টিক্যাল যোগ হয় বলে সহজে কমপিটিটররা সাইটটাকে বিড করতে পারে না। গুগলের কাছেও সাইটটা সবসময় আপ-টু-ডেট থাকে।
আমার কিছু নিস সাইট
চলুন, এবার আমার নিজের কিছু নিস সাইট নিয়ে কথা বলা যাক। এখানে স্ক্রিনশট শেয়ার করা হবে না। সুতরাং চাইলে আপনি এই কথাগুলো পড়তে পারেন, কিংবা ইগনোর করে যেতে পারেন। সম্পূর্ণটাই আপনার উপর নির্ভর করছে।
তবে ওভারঅল পড়লেই মনে হয় লাভবান হবেন। কারণ, এগুলো অনেকটা কেসস্টাডির মতো করে লেখার চেষ্টা করেছি।
আমার রেডিমেড নিস সাইট
গতবছর বেশ কিছু রেডিমেড সাইট কিনেছি। মিনি স্টার্টাপ টাইপ। যেগুলোর আর্নিং ছিলো প্রতি মাসে ২০ ডলার থেকে ১৫০ ডলার। আমার কেনা বাজেট ছিলো ৭০০ থেকে ৬০০০ ডলার।
এরমধ্যে তিনটা কিনেছি এই গ্রুপের ভাই-ব্রাদারদের কাছ থেকে। এই তিনটা সাইট নিয়েই কথা বলা যাক।
প্রথম সাইট
এটা কিনেছি ৭০০ ডলার দিয়ে। আর্নিং ছিলো অন এভারেজ ২০+ ডলার। কেনার পর আর্টিক্যাল যোগ করেছি প্রায় ৫০টা। খরচ/ইনভেস্ট করেছি প্রায় বারোশ’ ডলার। বর্তমানে প্রতিমাসে এটা থেকে আসছে ৬০/৭০ ডলার। এই বছর জুনের মধ্যে আরও ৫০টা আর্টিক্যাল পাবলিশ করার প্ল্যান। আর এই সাইট থেকে টার্গেট বছর শেষে আর্নিং দাঁড়া করানো ৩০০+ ডলার পার মান্থ। আশা করি হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় সাইট
এটা কিনেছিলাম ১৯০০ ডলার দিয়ে। এই সাইটটা নিয়ে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম বেশ জোরেশুরে। কিন্তু এক্সিসটিং নানান প্রজেক্টের কারণে এটা নিয়ে আগানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
সবদিক বিবেচনায় আপাতত এটার কাজ স্টপ রেখেছি। তবে চাইলেই এটাকে লাভজনক প্রজেক্ট হিসেবে দাঁড়া করাতে পারবো এই আত্মবিশ্বাস আছে। ইনশাআল্লাহ পারবো।
সাম্প্রতিক আপডেটে এটা একদম নাই হয়ে গেছে বলা চলে। মূল কারণ এটা আপডেট করা হয়নি প্রায় এক বছর হয়ে গেলো। এই প্রজেক্ট সম্পর্কে এজন্য বললাম- সাম্প্রতিক গুগলের এই আপডেটে এরকম সাইটগুলোই বেশি হিট খেয়েছে।
তৃতীয় সাইট
এই সাইটটা নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। ১৫০ ডলার আর্নিংয়ের সাইট ছিলো যখন কিনেছি। কিনেছি ছয় হাজার ডলার দিয়ে। আট মাস কাজ করার পর বর্তমানে আর্নিং ৩৫০+ ডলার পার মান্থ। এই বছরের শেষ নাগাদ ওয়ান কে ক্রস করবে আশা করছি।
টোটাল তেত্রিশটা মানি আর্টিক্যাল আছে সাইটটাতে। যেগুলোর মধ্যে মাত্র ৯/১০টা রেভিনিউ জেনারেট করছে। আরও ১০টার মতো প্রথম পেজে আছে। এগুলো প্রথম পজিশনে নিয়ে আসতে পারবো নেক্সট ছয় মাসের মধ্যে। আপাতত এই সাইট নিয়ে তা-ই প্ল্যান।
আমার স্ক্র্যাচ থেকে করা নিস সাইট
এবার আরও দুটো সাইট নিয়ে কথা বলবো। এগুলো আমি একদম স্ক্র্যাচ থেকে করেছি। দুইটা সম্পূর্ণ ভিন্নরকম দুইটা সাইট। আশা করি মনযোগ দিয়ে পড়লে অভিজ্ঞতাটা আপনার কাজে লাগবে।
স্ক্র্যাচ সাইট-১
এটা আমার পাইপলাইনে থাকা মোস্ট রেভিনিউ জেনারেট করা সাইট। নেক্সট ৩/৪ মাসের মধ্যে ছেড়ে দেবার প্ল্যান। আল্লাহ চাহেনতো তাই হবে। ডিসেম্বর আপডেটে হালকা একটু ধাক্কা খেয়েছে। যদিও আল্লাহর রহমতে সেটা কাটিয়ে উঠছি ধীরে ধীরে। কিন্তু আমার জন্য এটা একটা বড় শিক্ষা। এর আগে আর কখনও ফ্লিপ করার আগ মুহূর্তে আমার কোনো সাইট এরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করেনি।
এটা হিট খাওয়ার মূল কারন এক্সাক্টলি বের করতে পারিনি। আমার চোখে আমি কোনো সমস্যা খুঁজে পাইনি। জাস্ট একটাই ইস্যু- সাইটে অনেক দিন যাবৎ কোনো আর্টিক্যাল এড করা হয়নি। গত দু মাসে বেশ কিছু আর্টিক্যাল যোগ করেছি। এবং পুরনোগুলো আপডেট করেছি। নো নতুন ব্যাকলিংকস বা গেস্টপোস্টস। তবে সোশ্যাল শেয়ার করেছি আপডেটগুলো এবং নতুন আর্টিক্যাল এড করার পর। ট্রাফিক ধীরে ধীরে রিটার্ন করেছে আগের পজিশনে। অবশ্য কোনো তাড়াহড়ো করিনি।
স্ক্র্যাচ সাইট-২
এটা একটু ভিন্নরকম সাইট। পরীক্ষামূলক কাজ। প্রথম কারন হচ্ছে এটা গার্ডেন নিস। এই নিস নিয়ে আমি এর আগে কাজ করিনি। খুবই কঠিন হিসেব-নিকেশ করে সাইটটা বানানো। সাইটে আর্টিক্যাল আছে ১৪টা। ভিন্নরকম বলার দ্বিতীয় কারন হচ্ছে এটাই আমার একমাত্র সাইট যেটায় অনেক দিন কোনো কাজ না করার পরেও হুট করে ট্রাফিক এবং সেল বেড়ে গেছে। এর একমাত্র কারন যেটা খুঁজে পেলাম সেটা হচ্ছে এর কীওয়ার্ড রিসার্চ। এমন এমন কীওয়ার্ড আছে এটাতে যেগুলো আগামী আরও দুয়েক বছর কমপিটিটরহীন থাকবে আশা করা যায়।
দ্বিতীয় আরেকটা কারন এটা বলা চলে- সাইটটার ডিজাইন এবং এবং আর্টিক্যাল স্ট্রাকচার বেশ নিট এন্ড ক্লিন। ভবিষ্যতে নতুন সাইট তৈরি করতে আমি এই স্ট্রাকচার ফলো করবো, ইনশাআল্লাহ। আপতত এই সাইট নিয়ে কোনো প্ল্যান নেই। জাস্ট প্রতি মাসে ৬-৮টা করে আর্টিক্যাল দিয়ে যাবো সুনির্দিষ্ট স্ট্রাকচার ফলো করে।
শেষ কথা
আসলে শেষ বলতে কিছু নেই। দুই বছর আগে যেটাকে শেষ বলে জানতাম, এখন সেটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। মনে হয় কতই না কম জানি! আবার আগামী দুই বছর পর কী মনে হবে, জানা নাই। হয়তো বর্তমান অবস্থান থেকে সরে আসবো আরও অনেক অনেক দূর।
শুধু এটুকু বলতে পারি- সপ্তাহের ৭দিন কাজ করি দৈনিক ১৪/১৫ ঘণ্টা করে। কখনও কখনও ১৭/১৮ ঘণ্টাও বসে থাকি পিসিতে। এর ৮০% সময়ই ব্যয় করি পড়াশোনা এবং নেট সার্ফিং করে। আমার মনে হয়, আমার কাজে সফল হওয়ার জন্য এটা আমার দরকার। তাই আমাকে এই কাজ করতেই হয়।
আগামী দিনগুলোতে কী হবে, জানা নেই। জানা নেই আরও বছর পাঁচ/সাত পর গুগল থাকবে কিনা, কিংবা আমাজনইবা কতটুকু সাসটেইন করবে! আমি নিশ্চিত না। আপনারা কি নিশ্চয়তা দিতে পারেন কেউ?
তবে এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি- অনলাইন জগত থাকবে। মানুষের চাহিদা থাকবে। ফলে কেনাকাটাও থাকবে। হয়তো ধরণ পাল্টাবে। অ্যাআইয়ের আধিপত্য হবে। অ্যাআর হবে সত্যিকার দুনিয়া।
কিন্তু মানুষের চাহিদা থাকবে, এবং মানুষ কেনাকাটাও করবে। সুতরাং আমাদেরকে সেটাতেই ফোকাস করতে হবে। তখন আমাজন, কিংবা গুগল না থাকলেও যেন আমাদের সমস্যা না হয় সেটা দেখতে হবে। আর থাকলেও যেন তাদের উপযোগি হয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি- সেটাই হতে হবে আমাদের লক্ষ্য।
সবাই ভালো থাকুন।
হ্যাপি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং!